সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আপনি কি কখনও মাছের বৃষ্টি হতে দেখেছেন?

 প্রথমে আকাশে কালো মেঘ জমে। এরপর শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি, সেই সঙ্গে প্রবল বাতাস, বিদ্যুত্ চমক আর বজ্রপাত। অবিরাম এই বৃষ্টির সাথে মাটিতে আছড়ে পরে অসংখ্য জীবন্ত মাছ। এ রকম চলে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা। আর বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর শত শত জীবন্ত মাছ পড়ে থাকতে দেখা যায় মাটির ওপরে। লোকজন এসব মাছ কুড়িয়ে নিয়ে রান্না করে খায়।


 ১. শ্রীলংকা, চিলাও গ্রামে মাছের বৃষ্টি


শ্রীলংকার চিলাও জেলার একটি গ্রাম থেকে গ্রামবাসী দাবি করেন, আকাশ থেকে মাছের বৃষ্টি নেমে এসেছে তাদের গ্রামের ওপরে। তারা পথের ধারে ও মাঠে মাছ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে , আকাশ থেকে ঝরে পড়া ছোট ছোট মাছ। রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও এমনটাই ঘটেছে শ্রীলঙ্কার চিলাও জেলার একটি গ্রামে। অস্বাভাবিক এই মাছ-বৃষ্টিতে দারুণ আনন্দিত গ্রামবাসী। এ নিয়ে রীতিমতো উত্সবে মেতে ওঠেন তাঁরা।


গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ঘরের চালে আকাশ থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দে তাঁরা বাইরে ছুটে আসেন। খোলা মাঠে, বাড়ির আশপাশে, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মাছ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। তারা সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কিলোগ্রামের মতো মাছ কুড়িয়েছেন বলে জানান। খাওয়ার উপযোগী এই মাছ-বৃষ্টিতে আনন্দ-ভোজ শুরু হয়ে যায় গ্রামটিতে। তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এই মাছগুলো শ্রীলংকায় বেশ পরিচিত।


শ্রীলঙ্কায় এই মাছ-বৃষ্টি অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ২০১২ সালে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ‘চিংড়ি-বৃষ্টি’ হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল।


২. মেক্সিকো, টামপিকো শহরে মাছের বৃষ্টি


মেক্সিকোতে সম্প্রতি মাছ বৃষ্টি হয়েছে। টামলিপাস প্রদেশের টামপিকো শহরে সিভিল ডিফেন্সের কর্মকতাগণ সোশ্যাল মিডিয়া তে মাছ বৃষ্টির কথা জানান। হালকা বৃষ্টির সাথে পতিত কিছু মাছের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন স্থানীয়রা।


এই অঞ্চলে অবশ্য মাছের বৃষ্টি একেবারে বিরল নয়। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. র‌্যান্ডি সেরভানি এই ধরনের ঘটনাকে তাঁর লিখিত বইতে উল্লেখ করেন, “ঝড়ের আতংক” হিসেবে। সেরভানি লেখেন, “১৮৮৯ সাল হতেই জলীয় ঘূর্ণীর মাধ্যমে মাছগুলো বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কীভাবে তা ঘটে বলা মুশকিল। বর্তমানে সময়েও এধরনের মাছের পতনের যথাযথ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।”


৩. হন্ডুরাস, ইউরো শহরে মাছের বৃষ্টি


এক অদ্ভুত রহস্য হয়ে আছে হন্ডুরাসের নিয়মিত মাছ বৃষ্টি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এ অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে মে মাস থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি। প্রথমে আকাশে কালো মেঘ জমে। এরপর শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি, সেই সঙ্গে প্রবল বাতাস, বিদ্যুত্ চমক আর বজ্রপাত। অবিরাম এই বৃষ্টির সাথে মাটিতে আছড়ে পরে অসংখ্য জীবন্ত মাছ। এ রকম চলে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা। আর বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর শত শত জীবন্ত মাছ পড়ে থাকতে দেখা যায় মাটির ওপরে। লোকজন এসব মাছ কুড়িয়ে নিয়ে রান্না করে খায়। ১৯৯৮ সাল থেকে স্থানীয় লোকজন এ প্রাকৃতিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর উত্সবেরও আয়োজন করে।


বিজ্ঞানীদের ধারণা, আটলান্টিক মহাসাগরে সংগঠিত টর্নেডো উঠিয়ে নিয়ে আসে এই মাছগুলো এবং ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হন্ডুরাসের ইউরো শহরে ফেলে। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আরও একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। তাদের ধারণা- ১৮৫৬ সালে হন্ডুরাসে আসা এক সাধুব্যক্তির কারণে এ মাছ বৃষ্টি হয়। কথিত আছে, এখানে অনেক অভাবী লোককে না খেয়ে থাকবে দেখে- ঐ সাধুব্যক্তি তিন দিন, তিন রাত সৃষ্টিকর্তার কাছে অভাবীদের খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রার্থনা করেন। আর সেই প্রার্থনার কারনেই ঘটেছে অলৌকিক ঘটনা- মাছ বৃষ্টি।


কেন ঘটে এই মাছের বৃষ্টি?


বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘মাছ-বৃষ্টি’ অস্বাভাবিক হলেও প্রকৃতিতে এটা ঘটে থাকে। মাছসমৃদ্ধ কোনো জলাশয়ের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলে এমন হতে পারে। এ সময় জলে থাকা মাছ, ব্যাঙসহ সবকিছুই ঘূর্ণিবায়ুর সঙ্গে আকাশে উঠে যায়। এই ঘূর্ণিঝড় থেমে যাওয়ার পরও মেঘের স্তরের কারণে এরা সাময়িকভাবে আটকে থাকে ওপরেই। পরে একসময় মেঘের ভেতর থেকে ঝরে পড়তে শুরু করে জলজ প্রাণীগুলো। এভাবেই সাধারণত মাছ-বৃষ্টি হয়ে থাকে।

মন্তব্যসমূহ